আমেরিকার অ্যাকিলিস হিল (Achilles Heel)!
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে একটি সাধারণ নিয়ম রয়েছে, যা মেনে চললে যুদ্ধের ময়দানে সংঘর্ষের সময় একটি মৌলিক পার্থক্য তৈরী হয়। আজ অবধি, শুধুমাত্র একটি দেশই এই নিয়ম জানতো এবং সেই দেশটি ছিল ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান। কিন্তু মনে হচ্ছে অন্যান্য দেশও এই পন্থা অনুসরণ করতে চলেছে!
পূর্বে ইরান অনেক চেষ্টা করেছিল, যুক্তরাষ্ট্রের সাথে যাদের সমস্যা আছে তাদের কাছে এটি পরিষ্কার করার, কিন্তু কিছু বিবেচনা তাদেরকে এটি করতে বাধা দেয়। তবে মনে হয় যে, মধ্যপ্রাচ্য অঞ্চল এবং বর্তমান বিশ্ব পরিস্থিতি এমনভাবে গড়ে উঠেছে যে, রাশিয়া এবং সম্ভবত চীনও এই পলিসি বাস্তবায়ন করতে চলছে।
বাস্তবতা হল; যখনই প্রতিরোধ অক্ষ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, পশ্চিমা দেশগুলো, হিব্রু ও আরব ফ্রন্টের সাথে মৌলিকভাবে সমস্যার সম্মুখীন হয়েছে, তখনি শুধুমাত্র একটি জিনিসের মধ্যেই তারা সমাধান দেখেছে এবং তা হল ইসরায়েলের উপর চাপ সৃষ্টি করা। ইহুদিবাদী শাসক গোষ্ঠী এমন একটি ম্যালিগন্যান্ট গ্রন্থি (Malignant gland) এবং বিপজ্জনক ক্যান্সার, যে এই অঞ্চলের সমস্ত অপকর্ম পরিচালনা কল্পে সর্বদা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে সমন্বয় করে চলে।
আমেরিকান ফ্রন্ট সবসময় আক্রমনাত্মক, যার স্পষ্ট উদাহরণ সিরিয়াতে আই এস আই এল সন্ত্রাসীদের প্রতিষ্ঠা ও তাদেরকে প্ররোচিত করা এবং এটিকে চরমপন্থী ইসলামের নামে সমগ্র অঞ্চলে ছড়িয়ে দেওয়ার ব্যাপারে দেখেছি। এও দেখেছি যে, ঐ সকল সন্ত্রাসীরা সব সময় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের কোলে আশ্রিত হয়েছে।
সহিংসতার প্রসার টিকিয়ে রাখতে পারলে যে, শুধুমাত্র প্রতিরোধের অক্ষকে পরাজিত করতে মার্কিন লক্ষ্যমাত্রাই পূরণ হতো তা নয়, বরং ধীরে ধীরে আমেরিকার স্বার্থের অন্যতম প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী রাশিয়ার শক্তি ও স্বার্থকে হুমকির মুখে ফেলে দিতো। মূলতঃ মধ্যপ্রাচ্যে আমেরিকার আধিপত্য রাশিয়া ও চীনের দমকেও বন্ধ করে দিতো!
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে, ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান অন্তঃত রাশিয়ার কাছে এটি পরিষ্কার করতে সক্ষম হয়েছে এবং শহীদ কমান্ডার কাসেম সোলাইমানীর উদ্যোগে পুতিনকে সিরিয়া যুদ্ধে অংশ নিতে রাজি করাতে সফল হয়েছিল। আর সেটা ভালোভাবেই ঘটেছে এবং তা সিরিয়ায় আই এস আই এল-এর কোমড় ভেঙে দিয়েছে। আরো ভাল করে বললে এভাবে বলতে হয় যে, এ অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল চরম পরাজয় বরণ করেছে!
কিন্তু সম্ভবতঃ রাশিয়ার এ বিষয়টি উপলব্ধি করতে আরও বেশী সময়ের দরকার ছিল যে, ইসরায়েলের অস্তিত্ব আগে যা ভেবেছিল তার চেয়ে অনেক বেশী বিপজ্জনক। অতএব, ইউক্রেনের যুদ্ধ শুরু এবং জেলেনস্কির মার্কিনী সরকারের প্রতি ইহুদিবাদীদের সমর্থন এমনকি রাশিয়ার বিরুদ্ধে ফ্রন্টে ইসরায়েলী সৈন্যদের অংশগ্রহণের মাধ্যমে, পুতিন এবার ইরানের পলিসির যথার্থতা উপলব্ধি করতে সক্ষম হয়েছেন।
এখন যেহেতু রাশিয়া ও ইসরায়েলের মধ্যে উত্তেজনা বাড়ছে, তাই উপসংহারে এটাই বলা যায় যে, ভ্লাদিমির পুতিনও বুঝতে পেরেছেন, মার্কিন পক্ষের চাপ কমাতে হলে সামরিক ও অর্থনৈতিক উভয় দিক থেকে যা মৌলিক সমাধান হতে পারে তা হচ্ছে ঐ পলিসি, যা সর্বদা প্রতিরোধ সংঘঠনগুলো বাস্তবায়ন করে থাকে।
আর এখন আমরা মস্কো-কিয়েভ যুদ্ধের সত্তুরতম দিনে প্রবেশ করেছি, যেখানে রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্র স্পষ্টভাবে বলেছেন যে, ইহুদিবাদী ভাড়াটেরা রাশিয়ার বিরুদ্ধে ইউক্রেনীয় নাৎসিদের পাশাপাশি যুদ্ধ করছে। একই সঙ্গে ক্রেমলিনে হামাসের প্রতিনিধিদলকে রুশ নেতাদের স্বাগত জানানোও গণমাধ্যমের আলোচিত বিষয় হয়ে দাড়িয়েছে!
সেই সাথে সাম্প্রতিক দিনগুলোতে চীনা প্রতিরক্ষা মন্ত্রীর প্রায় নজিরবিহীন তেহরান সফরকে এর পাশে রাখুন, ফলে ইহুদিবাদী শাসকদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ আন্দোলনের ক্রমবর্ধমান চাপ, যা সম্প্রতি ইসরায়েলকে অভূতপূর্ব চাপের মধ্যে ফেলেছে।
রাশিয়া ইউক্রেনে এবং চীন তাইওয়ানে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে যে সমস্যার মধ্যে দিন অতিবাহিত করছে তা যদি বাদও দিই, তারপরো এটি ভুলে যাওয়া উচিত নয় যে, বেইজিং ও মস্কো বর্তমান পরিস্থিতিটিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পতনের জন্য অনন্য উপায় হিসাবে দেখছে। আর এই পরিস্থিতি এতটাই আকর্ষণীয় এবং বিজয় এতটাই সহজলভ্য যে, তারা এত সহজে এই বিষয়টিকে হাতছাড়া করতে চাইবে না।
পরিশেষে কারো কারো পক্ষে এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টির উপলব্ধি কঠিন হতে পারে যে, ইরান এই মহান অক্ষের সমন্বয় ও নির্দেশনা দিচ্ছে এবং এই ইরানই প্রাচ্যের শক্তিগুলোকে বোঝাতে সক্ষম হয়েছে যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অ্যাকিলিস হিল হচ্ছে ইসরায়েল এবং পশ্চিম এশিয়ায় মার্কিন আধিপত্যের অবসান না ঘটলে সারা বিশ্বে এই আধিপত্যের অবসান হবে না।
✔️নূরে আলম মুহাম্মাদী।